আজ ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সালের ঠিক আজকের দিনে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। ঢাকা সিটি কলেজের মত একটি বিশাল বিদ্যাপিঠকে তিনি বিদায় জানালেন। তিনি শুধু আমাদের শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন আমাদের কলেজ পিতা। তার স্মার্টনেস, দূরদর্শিতা এত বেশী ছিলো তার অদম্য প্রচেষ্টায় ঢাকা সিটি কলেজ আজও দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে পেরেছে।
হাফিজ স্যার প্রায় ৩৯ বছর শিক্ষকতা করেছেন এর মধ্যে ৩৩ বছরই কলেজের প্রিন্সিপাল রুপে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
তার ব্যক্তিত্ব ছিলো আর্মির জেনারেলদের মত। বাইরে অনেকে তাঁকে মনে করতো উনি এক্স আর্মি ছিলেন। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেসও করেছে, উনি কি আর্মি ছিলেন?
বাংলাদেশে চার্টাড একাউন্টেন্ট ও এফসিএমের প্রায় অর্ধেকই ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র। অর্থাৎ আজকে ব্যাংক,বীমা, শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ভাবে পরিচালনায় ঢাকা সিটি কলেজ নিরব ভূমিকা পালন করছে। বলতে গেলে বাংলাদেশে আধুনিক বাণিজ্য শিক্ষার রুপকার ঢাকা সিটি কলেজ।
অথচ এর যে কমান্ডার প্রিন্সিপাল হাফিজ উদ্দিন তিনি কোন জাতীয় পুরস্কার পাননি। তিনি চাইলে পারতেন।
কারণ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাদেক হোসেন খোকা তার ছাত্র জীবনের পরিচিতি।
এমনকি বর্তমান প্রধান মন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথেও তার যোগাযোগ ছিলো।
তিনিতো তেল দিয়ে কিছু করবেন না, আদর্শ বিসর্জন দিবেন না। সরকার না দিলেও জাতি তাঁকে সম্মানিত করেছে তাকে মনে রেখে।
বাংলাদেশে হাজার কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে কয়জন জানে এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের প্রিন্সিপালের নাম।
অথচ অজ পারাগাাঁয়েও যদি জিজ্ঞেস করা হয়?প্রিন্সিপাল হাফিজ উদ্দিনকে চেনেন বলবে হ্যাঁ। বাণিজ্য শিক্ষার সাথে জড়িত প্রায় সবাই তাঁকে চেনে। এটাই তাঁর কৃতিত্ব।
প্রসঙ্গে আসা যাক, হাফিজ স্যার কোন দিন কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যেতেন না ।
কলেজই ছিলো তার জীবন-মরণ। এমনকি স্ত্রী সন্তানদেরও উনি সময় দিতেন না। সকাল ৭টা থেকে রাত অবধি কাজ করতেন।
অনেকে জানেন না তার ঘাড়ে তিনটি অপারেশন হয়েছিলো তারপরও উনি দমে যাননি। তার অনেক কাছে থাকার দরুন অনেক কিছু দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
কোনদিন ম্যামকে নিয়ে কােথাও ঘুরতে যাননি।
হয়ত বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন।
এক্স প্রিন্সিপাল আনোয়ার স্যার বললেন, ম্যাম তাঁকে ফোন করে বলেছেন,
“হাফিজ আমাকে কোনদিন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়নি, আজ শেষ যাত্রায় আপনারা কি আমাকে নেবেন?”
বিখ্যাত লোকরা মনে হয় এমনই হয়!
শোক সভায় কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্যার বললেন, আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন হাফিজের মত মরতে পারি। জীবনের শেষে উনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন সিংগাপুরে একা একা ট্রিটমেন্ট করালেন। আবার কলেজও করলেন।
এই খবর শুধু জানতেন আনোয়ার স্যার। তাঁকে বললেন অসুবিধা নেই বয়স হয়েছে সমস্যা হতেই পারে। এটা এখন জানালে কলেজে প্রভাব পড়তে পারে। আর আগামী মাসে আমার এলপিআর, সম্ভবত আমি বিদায় নেব না।
শেষে ১০ই ডিসেম্বর তিনি অসুস্থ হয়ে স্কয়ারে ভর্তি হলেন এবং ২৯ শে ডিসেম্বর পৃথিবীকে বিদায় জানালেন এই দেশ প্রেমিক মহান শিক্ষক, শিক্ষক সমাজের শিরোমণি।
যতদূরে যান তবু রবেন অম্লান আমাদের স্মৃতিপটে হে বিজয়ী বীর আমাদের সর্ব্বোজ্জন শ্রদ্ধেয় হাফিজ উদ্দিন স্যার। মহান আল্লাহ স্যারকে যেন জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।